নভেম্বার ২৯, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

+৮৮০১৭৪৪-২২১৩৮৫

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বলছি.....

  • Views: 9271
  • Share:
আগষ্ট ১, ২০২৪ ১৮:১৯ Asia/Dhaka

নিশি মোহন নাথ::  যথাযথ সম্মান রেখে কথাগুলো আপনাদের বলব। বাংলাদেশ বর্তমানে একটি মধ্যম আয়ের দেশ। এদেশের বিপুল জনশক্তি রয়েছে। রাষ্ট্রটি ছোট হওয়ায় সকল জনশক্তি যথার্থভাবে এমপ্লয় করা সম্ভব নয়। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্ব বাজারে এই জনশক্তির বিপুল চাহিদা। যদিও দক্ষ  জনশক্তির অভাবে বিশ্ববাজারে আমরা ততটা ইম্পরট্যান্ট রোল প্লে করতে পারি না তবে, লোয়ার স্ট্যাটার জবগুলোতে ভালই পারর্ফম করছি।

আমরা যারা বিদেশে পাড়ি দিয়েছি, নিশ্চয় পরিবার-পরিজন তাদের অন্ন-বস্ত্র সহ পরিবারের যাবতীয় খরচাদি ব্যয়ভার নির্বাহ আসল লক্ষ্য। পরিবার-পরিজনকে একটু ভালো রাখতে, নিজের সকল সুখ স্বাচ্ছন্দ্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে প্রবাসে পাড়ি দেওয়া। 

তাহলে মুখ্য লক্ষ্য কি হলো? 
নিজ পরিবারকে ভালো রাখা। নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য একটু ভালো জীবন, তাইতো? এজন্যই তো বিদেশ বিভূঁইয়ে কষ্ট করে, নিজ পরিবারকে প্রতি মাসে আপনার কষ্টার্জিত পরিশ্রমের প্রাপ্যটুক দেশে প্রেরণ করে থাকেন। 

এখন আসি, আপনার প্রেরিত ট্রান্সফার পেমেন্ট যাকে আমরা রেমিটেন্স বলি, যেমন আপনার পরিবার-পরিজনের খোরাক যোগায়, তেমন দেশের অর্থনীতিতে একটা বিরাট রোল প্লে করে থাকে। কারণ আপনার প্রাপ্য মজুরি আসে ফরেন কারেন্সিতে আর সেটা বিডিটিতে (টাকাতে) কনভার্ট হয়ে আপনার পরিবার এর কাছে পৌঁছায়। সরকার সে প্রেরিত ট্রান্সফার পেমেন্ট (রেমিটেন্স) এর উপর শতকরা আড়াই পার্সেন্ট প্রনোদনা দিয়ে থাকে। 

কেন দিয়ে থাকে? যাতে আপনারা বৈধ্য  চ্যানেলে পেমেন্টটা প্রেরণ করেন।

বৈধ চ্যানেলে প্রেরণ করলে কি লাভ?
এজন্য একটু কঠিন বিষয়টাকে বুঝতে হবে‌। একটা দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সামারিকে বলে ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট। 
ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ফরেন কারেন্সি ইনফ্লু বা আগমন ঘটে থাকে ছয় ভাবে-
১) এক্সস্পোর্ট অফ গুডস প্রসিডস ( পণ্য রপ্তানি থেকে আয়)।
২) এক্সপোর্ট অফ সার্ভিস প্রসিডস (সেবা রপ্তানি থেকে আয়)।
৩) নন রিপেয়েবল ট্রান্সফার পেমেন্ট (যেটাকে আমরা ফরেন রেমিটেন্স বলি)।
৪) রিপেমেন্ট রিসিভড প্রম ল্যান্ডিং (বিদেশে প্রদত্ত ঋণ থেকে আয়)।
৫) সেইল অ্যাসেট।
৬) বরোইং ফর্ম ফরেন সোর্স (বিদেশ থেকে ঋণ)।

এখন আসি সেই ফরেন কারেন্সিগুলো আমরা কোথায় ব্যবহার করে থাকি। যেখানে ফরেন কারেন্সির  আউটফ্ল বা বহির্গমন ঘটে থাকে। সেটাও  কিন্তু ছয় ভাবে ঘটে থাকে-
১) আমরা পণ্য আমদানি  করি।
২) আমরা সেবা আমদানি করি। 
৩) আমাদের দেশে যেসব বিদেশীরা কাজ করেন তাদের মজুরি দেই, তারা তাদের দেশে রেমিটেন্স পাঠায়।
৪) বিদেশ থেকে গৃহিত ঋণের পেমেন্ট প্রদান করে থাকি।
৫) বিদেশ থেকে কোন এসেট ক্রয় করি। 
৬) অতিরিক্ত থাকলে বিদেশে ঋণ দিয়ে থাকি।

রেমিট্যান্স যুদ্ধারা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
 কারণ বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করা হয় তার বহুগুন পণ্য আমদানি করা হয়। তাহলে ট্রেড ডেপিসিয়েট বা অসামঞ্জস্য থেকে যায়। এটা কিভাবে কাভার হয়। কারণ আপনারা রেমিটেন্স ফরেন কারেন্সি পেমেন্ট করে থাকেন, সেই ফরেন কারেন্সি থেকে কাভার দেওয়া হয়। আর যখন তাতেও কাভার না হয় তখন ঋণ করা হয়। তাই আপনারা এত সম্মানী। আপনাদেরকে  রেমিটেন্সে যুদ্ধা বলা হয়।

আচ্ছা ধরে নিলাম আপনারা অভিমানী হয়ে গেলেন। আপনারা আর কোন রেমিটেন্স পাঠাবেন না। তাতে কি হবে? কোন না কোনভাবে তো আপনার পরিবার পরিজনের কাছে টাকা পাঠাতেই হবে‌। ভালো সিদ্ধান্ত নিলেন, হুন্ডিতে পাঠাবেন।

হুন্ডি কি? 
হুন্ডি হল একটা অবৈধ পন্থা। যার মাধ্যমে বিদেশে অর্জিত ফরেন কারেন্সি বিদেশে থেকে যায়। দেশ থেকে সেই টাকা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে দেশে অবৈধ উপায়ে যারা টাকা উপার্জন করে তারা বিদেশে পাচার করে নেয়। আরো অনেক কিছু ঘটে থাকে। অবৈধ বাণিজ্য। অবৈধ পণ্যের বাণিজ্য। 

তাহলে আপনি কি করলেন? টাকা পাচারকারীকে সুযোগ করে দিলেন বা অবৈধ বাণিজ্যকারীদের সহায়তা করলেন। যারা দেশ থেকে চুরি বাটপারি করে অর্জিত টাকা আপনার মাধ্যমে ফরেন কারেন্সিতে কনভার্ট করে বিদেশ পাচার করে নিল। 

একবার চিন্তা করে দেখেন তো এই দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করেছে, আপনার হুন্ডিতে টাকা প্রেরণের কারনে তাকেই আপনি সাহায্য করেছেন। তাইলে পরোক্ষভাবে আপনিও টাকা পাচারকারী। কল্পনা করলে কেমন লাগে? 

আচ্ছা তারপরেও  সিদ্ধান্ত নিলেন, না আমি বিপ্লবী হয়ে গেছি। হুন্ডিতেই টাকা পাঠাবো, রাষ্ট্রের বারোটা বাজিয়ে দিব।
ভাই রাষ্ট্রের বারোটা বাজার আগে আপনার তেরো টা বেজে যাবে। 
কেমনে তাইতো? 
এখন বলি যখন রেমিটেন্স এর কারণে ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট এর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তখন রাষ্ট্র ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট কে কভার করতে গিয়ে, বিদেশ থেকে ঋণ ফরেন কারেন্সিতে নিবে। ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে দিবে। কৃষির উপর সকল ভর্তুকি হ্রাস পাবে। অভ্যন্তরীণ কৃষিজ পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। মুদ্রার অবমূল্যায়ন হবে। আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। যার ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারেও জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। আপনার প্রেরিত রেমিটেন্সে পরিবার-পরিজনের খরচাদি খুলাবে না। 

হয়তো বিদেশ বিভূঁইয়ে পাড়ি দেওয়ার সময় কোন স্থায়ী সম্পত্তি বিক্রি করে গেছেন, এমন পরিস্থিতি হলে বাকি যেটুকু থাকবে সেটুকু হয়তো বিক্রি করতে  হবে।

আচ্ছা ধরে নিলাম আপনি বিদেশে অনেক টাকা পয়সা ইনকাম করেন, জিনিসপত্রের দাম যতই বাড়ুক তাতে আপনার কিছু যায় আসে না। কিন্তু যখন আপনার অর্জিত উপার্জন অবৈধ পথে দেশে আসবে, সেই উপার্জন দিয়ে কোন সম্পদ করে থাকলে, সে সম্পদও অবৈধ হয়ে যাবে। কারণ বৈধ পথে প্রেরিত রেমিটেন্স সম্পূর্ণ ট্যাক্সের আওতামুক্ত। কিন্তু যদি তা অবৈধ পথে আনয়ন করা হয়, তবে তার ওপর ট্যাক্স প্রদান করতে হবে। 

একটা কথা বলি অভিমানী হওয়া ভালো, তবে এমন অভিমান নয় যেটা আত্মঘাতী হয়। যেটা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মত হয়। 

আর হ্যাঁ যেসব গুজবকারীরা বলছে, ব্যাংকে টাকা রাখলে টাকা থাকবে না। সরকার নিয়ে যাবে, হেনতেন আরো কত কিছু। একটা জিনিস বলি ভাই, একটু নিজের বিবেক-বুদ্ধি খাটাবেন। এর জন্য রকেট সাইন্স বুঝতে হবে না। খুব সহজ এবং সরল, এই যে আপনি যখন বিদেশ যান, তখন দেশ থেকে কি দশ টাকার ও একটা নোটও নিয়ে যেতে পারেন? আর নিয়ে গেলেও সেটার মূল্য কি ওখানে থাকে? তাহলে টাকা কোথায় যাবে? দেশের টাকা তো দেশের ভিতরেই থাকবে। আর সরকারের কি টাকার অভাব? যদি অভাব পড়েও যায়, যেমন অর্জিত রেভিনিউ থেকে খরচাদি কভার করা সম্ভব হচ্ছে না, সরকার নতুন নতুন ট্যাক্স এর ক্ষেত্র চিহ্নিত করে নিবে বা সরকার মুদ্রার অবমূল্যায়ন করবে, টাকা ছাপিয়ে নিবে। 

আপনারা টাকা পাচার বলতে যেটাকে বুঝেন সেটা টাকা পাচার না ভাই, সেটা হয় ফরেন কারেন্সি পাচার। আর আপনারা  হুন্ডিতে আপনার কষ্টার্জিত পারিশ্রমিক প্রেরণ করে সেই পাচারকারীদের সাহায্য করবেন।
 তাই সিদ্ধান্ত আপনার।

একটা জিনিস বলি পানিতে কোপ মারলে কখনো পানি কাটেনা, কাটে নিজ পা।

নিশি মোহন নাথ:
ব্যবস্থাপক (এস পি ও)
রূপালী ব্যাংক পিএলসি,
বন্দর বাজার শাখা, সিলেট।
বিএসসি (অনার্স), এমএসসি (সাস্ট),
এল এল বি (এন ইউ),
এম বি এম (বিআইবিএম -ডিউ)।

user
user
Ad
Ad