নভেম্বার ২৯, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

+৮৮০১৭৪৪-২২১৩৮৫

স্যালুট যদু মাস্টার!

  • Views: 730
  • Share:
জানুয়ারী ৬, ২০২৪ ১০:৪৮ Asia/Dhaka

ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস সোহেল: ভোরের স্বর্গীয় আভায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। প্রতীক্ষিত কাঙ্খিত দিন। ট্রমা বিষণ্নতা এবং সমাজের চারপাশের নানা পদের ব্যবহারে তাল মিলাতে না পেরে বিহবল এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কোথায় যেন আক্ষেপের ছাপ? প্রিয়জনদের  অস্তিত্বহীন গায়েবী মামলায় যদু মাস্টার আজ কাঠগড়ায়। ভাবতে ভাবতে তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। ইদানিং চোখের জ্যোতি দূরে বা কাছে টাহর করতে বাধঁ সাধে। আজ কেন যেন থাকে বেশ ঝরঝরে লাগছে। চোখে মুখে ঝলখানি। প্রায়শ:ই আনমনে বলে ওঠে ইউরেকা! চারপাশের মানুষজন তাকে ছন্নছাড়া বিপরীত যাত্রার মানুষ ভাবে।

যদু মিয়া দু-দশক কাল অবধি নিষ্ফলা মাঠের কৃষক। যার পদচারণায় সর্বত্রই সারল্য সহজীপনা আন্তরিকতা প্রাধান্য পায়।এ মানুষটা কর্মক্ষেত্রে অর্পিত দায়িত্ব পালনে কখনো সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে কটু কথা শুনেনি। যে কিনা শিষ্য  অন্ত:প্রাণ। শিক্ষা এবং ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে তাদের নিয়েই ভাবে। কোন কারণে কেউ যেন পথ না হারায় সেখানটায় রাখালের ভূমিকায় দেখা যায়।সাময়িকভাবে কাউকে লাভ দেখাতে পছন্দ করেনা। যার খেসারতে জনপদের কেউ কেউ বাড়তি পাওয়ার আশায় শুরুতে গুড়গুড়  করলেও এক সময় হতাশ হয়ে কেবলা বদলায়। এমন মাস্টার ই কিনা স্বজাতির ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বলি। হায়রে মানুষ!

মানুষটার অনেক গুণ আছে। যা সময়ের স্রোতে বেশ বেমানান। এসব গুণের স্বীকৃতি প্রায়শই ন্যায্য হিস্যার কাছে টানতে দেয় না। যদু মাস্টার একরোখা বেয়াদব মুখের উপর কথা বলে যৌক্তিক বিশ্লেষণে কাউকে ছাড় দেয় না। যিনি কিনা তেলবাজিতে একেবারেই কাঁচা খেলোয়াড়। এ মশাই কি করে সময়ের সুবিধা পাবে?

বছর দুয়েক আগে তার গায়ে শকুনির থাবা পড়ে।শুরুতে বিহবল হলেও আবার জেগে উঠে।অপলক চাহনিতে দেখতে পায় তার সতীর্থ লাভ এবং লোভের আশায় বকধার্মিক কপটদের খপ্পরে পড়ে আচানক অভিযোগে দৃশ্যমান। কথিত ধর্মানুশীলনে পারঙ্গম মানুষগুলোর দ্বিচারিতায় যদু মাস্টার খেই হারিয়ে ফেলে। বেশ কিছুদিন নিজের সাথে লড়াই করে আপস না করার সিদ্ধান্ত নেয়।কেনই বা হাত মেলাবে? যার রক্তে আপোষের অনুপস্থিতি। এতোটুকুন বিশ্বাস আছে আহত সিংহ অনেক বেশি শক্তিশালী। এসব রসদ  নিয়ে তিনি অন্যায় অনিয়ম অপবাদকারীদের নানাভাবে মোকাবেলা করতে থাকে। কায়েমি স্বার্থবাদীরা থেমে থাকে না। তাকে বেয়াদব তকমা দিয়ে দমাতে চেষ্টা করে।কিন্তু বিধিধাম।যদু মিয়ার  মোহনীয়ভঙ্গি এবং ব্যক্তিত্বের জোর যে ঠুনকো নয়। শেষতক কথিত আমির পিছুটান দিয়ে লেজ গুটায়। এসব ই কাল হয়ে দাঁড়ায়।

যদু মিঞার চারপাশ আজ কপটের আধিক্য। এসব তাপসেরা মধু খেতে পছন্দ করে। চলনে বলনে দেখতে সাদাসিধে মনে হলেও এরা সন্তানতুল্য ছাত্রীদের পোশাকের শালীনতা নিয়ে রগরগে মন্তব্য করে স্বীয় চেহারার প্রকাশ ঘটায়। এসবে তাদের যায় আসে না। এদেশের সব দলের সাথেই এদের সখ্যতা। কেনই বা হবে না? যাদের বেড়ে ওঠা দিনেও রাতে দুই দলের সাথে গাঁ ভাসিয়ে। তাদের কাছ থেকে কি ই বা আশা  করা যেতে পারে? এরা নানা অনিয়ম বিচ্যুতিকে  বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। যারা কিনা প্রিয় বিবির তরী নোঙ্গরে ভেড়াতে মাঝির ভূমিকায় বৈইটা চালাতেও লজ্জিত হয়না। এরা আবার পরীক্ষা কক্ষে পছন্দের মানুষের অনিয়মে চোখে আন্দাইর দেখে।

যদু মাস্টারকে সমাজের মানুষ অনেক পছন্দ করে। নানা দরজার মানুষের সাথে তার সখ্যতা। ডান বাম সকলে ই তাকে স্পষ্টবাদী সৎ এবং একরোখা হিসেবে চেনে। পারত: কারো ক্ষতি করে না । জ্ঞানত: কেউ তার বিচারে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কাউকে বিশেষ ভাবে দেখেনা। শিষ্যরা তার কাছে সবাই সমান। এলাকা ধর্ম বা লিঙ্গীয় পরিচয়ে আলগা কদর পায়না। আর যাই হোক এ মানুষ  বেনামে কারো পিছু নেয় না। যার নিয়ত ব্রত হল অস্থিরতা অনাচার নৈতিক প্রতিবন্ধিত্ব দাম্ভিকতা এসব প্রপঞ্চের অসারতা তুলে ধরে সামাজিক সম্পর্কের মাঝে  ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ আনয়ন। চারপাশের জন নানাভাবে তাকে কক্ষচ্যুতির ফন্দি আঁটে। এসবে যদু মাস্টার ঢলে না।

এ মাস্টার মশাই নীরবে অগণিত ভক্তের ভালোবাসায় সমৃদ্ধ।আজ সে মুক্ত। আনীত গায়েবী অভিযোগ মাস্টার মশাই কে গায়েল করতে পারেনি।মিথ্যে রটনা দিয়ে কতদূর যাওয়া যায়? যদু মিয়ার চারপাশ আজ বেশ অপরিচিত লাগছে। যেখানটায় দুই  দশক গাধার  খাটুনি বিলালো। সেখানে দাঁড়িয়ে কিনা ভাবছে  বড্ড বড় ভুল করেছি! নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কি দরকার ছিল? অপাত্রে ঘি ঢালিনি তো? এসব আওড়াতে আওড়াতে ঘুমিয়ে পড়ে।

সম্বিত ফিরে পেয়ে নিজেকে বড় একা লাগে।  পরক্ষণেই ভাবে ভালো মানুষেরা একাই হয়। নীরব দর্শক শ্রোতা এবং পছন্দের ভক্ত অনেক থাকে। দুষ্ট লোকেরা সঙ্ঘবদ্ধ। শেয়ালের মতো হাঁক দিলেই জড়ো হয়ে যায়। মশাই কাজে মনোনিবেশের চেষ্টা করেন।কিছুতেই মন বসেনা।আনমনে ভাবে এ জনপদে তার কি এতোটুকুন ঠাঁই নেই, যেখানটায় দাঁড়িয়ে শুনতে পাবেন ভুঁইফোড়  অভিযোগ থেকে মুক্তিলগ্নে অপরাধী এবং দাবারুরা পাকড়াও হয়েছে।সমাজ ও জাতি তাদেরকে চিনতে পেরেছে।তবে যদু মিয়ার স্বস্তি হল এসব মানুষেরা যে মাঠের কোচ সেখানকার খেলোয়াড়দের চোখে আলবৎ ভিলেন। ধর্মের তকমায় চেহারা ও লেবাসে স্বাভাবিক মনে হলেও এদের মুখোশ সবার কাছে উন্মুক্ত। সাধারণের হৃদয়ে এদের জায়গা সামান্যই বাকি আছে।

যদু মিয়ার ছোট বাবু নিয়ত আওড়ায় জাগাও তোমার জাতি বাঁচাও তোমার দেশ এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করনি শেষ। তার ধমনীতে ও এ রক্ত প্রবাহমান। সে ভাবে তার অনেক কাজ বাকী।সে বুঝতে পারে জাতি দেশ তার কাছ থেকে অনেক কিছুই আশা করে। মাস্টার  নতুন করে লড়াই করার শপথ নেয়। স্রোতের বিপরীতে এমন বুকের পাটা দেখে স্যালুট জানাতে ইচ্ছে হয়। দৃশ্যপটে হঠাৎ যদু মিয়া হাওয়া হয়ে যায়। হয়তো দেখা মিলবে নতুন কোন মিশনে। আর এসবের তেজে  জ্ঞানপাপী দাম্ভিক ছাই হয়ে  যাবে। এবং যদু মিয়ারা স্বস্তি পাবে। মশাইয়ের  বিশ্বাস গীবতের দায় শোধ হয় না এবং প্রকৃতি তাড়াহুড়োও  পছন্দ করে না। অমুঘ নিয়মেই তারা ধরা পড়বে। যদু মাস্টারের এখনো অনেক পথ বাকি। সোনালী সূর্যের প্রত্যাশায় হাঁটতে শুরু করে।

লেখকঃ ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস সোহেল
অধ্যাপক , সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। 
ইমেইল: alioakkas@gmail.com

user
user
Ad
Ad