নভেম্বার ২৯, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

+৮৮০১৭৪৪-২২১৩৮৫

মাদরাসার এমপিও নীতিমালার অসঙ্গতি নিরসনের উদ্যোগ

  • Views: 593
  • Share:
মার্চ ২২, ২০২২ ১১:১৮ Asia/Dhaka

টিবিসি রিপোর্ট ::  মাদরাসার সংশোধিত এমপিও নীতিমালা জারি হয়েছিল ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর জারি হওয়া নীতিমালাটিতে শিক্ষকদের আশা-আকাঙ্খা পূরণ হয়নি। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে নীতিমালা কয়েকটি অংশ সংশোধন করা হলেও নীতিমালায় বেশ কিছু অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি নতুন শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার পর বেশ কিছু অসঙ্গতি সামনে এসেছে। অনেকে নীতিমালার নানা অসঙ্গতির কারণে এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। অবশেষে সংশোধিত নীতিমালার অসামঞ্জস্যতা নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর নীতিমালার অসামঞ্জস্যতা খুঁজে বের করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের তা নিরসনের সুপারিশ পাঠাবে। এ জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার এ কমিটি গঠনের আদেশটি প্রকাশ করেছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।

জানা গেছে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থ শাখার উপপরিচালকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগের পরিদর্শক এবং সদস্য সচিব হিসেবে আছেন প্রশাসন শাখার সহকারী পরিচালক। 

অধিদপ্তর জানিয়েছে, কমিটি বেসরকারি মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮(২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) এর বিভিন্ন অসামঞ্জস্যতা চিহ্নিত করবেন। এসব অসামঞ্জস্যতা দূর করা বিষয়ে আইন, বিধি ও নীতিমালা পর্যালোচনা করবেন এবং বিষয়টি নিয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করকেন। আর বিভিন্ন অসামঞ্জস্যতা দূর করার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করবেন। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে সুপারিশ দাখিল করতে বলা হয়েছে। 

মাদরাসার সংশোধিত এমপিও নীতিমালা কিছু অসঙ্গতিতে বিভিন্ন মাদরাসায় নতুন নিয়োগ সুপারিশ পেয়ে যোগদান করা নতুন শিক্ষকরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। সংশোধিত মাদরাসায় এমপিও নীতিমালায় উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকদের মাদরাসায় কৃষি শিক্ষক পদে সুপারিশ পেয়ে এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়া হলেও প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে স্নাতকদের এমপিওর আবেদন অগ্রায়ন করা হচ্ছে না। এর কারণ সংশোধিত এমপিও নীতিমালায় এ পদে নিয়োগের যোগ্যতায় প্রাণিবিদ্যা বিষয়ের কথা উল্লেখ নেই। অথচ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের এমপিও নীতিমালায় দাখিল মাদরাসায় কৃষি শিক্ষক পদে নিয়োগে প্রাণিবিদ্যা থেকে স্নাতক করার প্রার্থীদের সুপারিশ পেয়ে এমপিওভুক্ত হতে পারতেন। আর স্কুলের কৃষি শিক্ষক পদে প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে স্নাতকদের নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে জারি করা স্কুল-কলেজের এমপিও নীতিমালায়ও রাখা হয়েছে। 


অপরদিকে নতুন শিক্ষকদের অভিযোগ, নীতিমালায় বিএড বাধ্যতামূলক করা কৃষি বিষয়ে  দাখিল মাদরাসায় সুপারিশ পাওয়া নতুন শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন অগ্রায়ন করা হচ্ছে না। যদিও স্কুলের কৃষি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য বিএড কোর্সে অংশগ্রহণের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এসব জটিলতকায় এমপিওভুক্তি নিয়ে শঙ্কায় আছেন মাদরাসায় কৃষি শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা। ভুক্তভোগী প্রার্থীরা জানান, মাদরাসায় যোগদান করা অর্ধশতাধিক নতুন শিক্ষক এ জটিলতায় এমপিওভুক্তি নিয়ে শঙ্কায় আছেন। 

জানা গেছে, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মে মাদরাসার এমপিও নীতিমালা কিছু অংশ সংশোধন করে আদেশ জারি করা হয়। গত ২৯ এপ্রিল মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো নিয়ে কিছু শর্ত দিয়েছিলো অর্থ মন্ত্রণালয়। যদিও নীতিমালা জারি করা হয়েছিল ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ নভেম্বর। সংশোধিত নীতিমালায় অর্থমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই কিছু পদসৃষ্টির নির্দেশনা থাকায় কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগকে সেগুলো বাতিল করার নির্দেশনা দেয় অর্থ বিভাগ। সে প্রেক্ষিতে গত ১২ মে তড়িঘড়ি করে নীতিমালা সংশোধন করে আদেশ জারি করে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। 

তবে সাধারণ শিক্ষকদের অভিযোগ, যাদের জন্য (শিক্ষক-কর্মচারী) নীতিমালা তাদের দাবি দাওয়া পূরণ না করেই বা অসঙ্গতিগুলো দূর না করেই আমলাদের মনমত নীতিমালা জারি করা হয়। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় তা সংশোধন করা হয়েছে। শিক্ষকদের চাওয়া পাওয়ার বিষয়টি দুই ক্ষেত্রেই ছিল উপেক্ষিত। গত ২৮ মার্চ জারি করা স্কুল কলেজের নতুন নীতিমালায় শিক্ষক কর্মচারীদের যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে সেগুলো নিয়ে সংশোধনের সাথে জড়িত আমলারা চিন্তাও করেননি।

সাধারণ মাদরাসা শিক্ষকরা  জানান, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে জারি কার বেসরকারি স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় এ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় বা কলেজে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতি পেতে এবং ডিগ্রি কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে ১০০ নম্বরের নয়টি মূল্যায়ন সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে, কিন্তু মাদরাসার এমপিও নীতিমালায় নির্ধারণ করা হয়নি। নীতিমালা সংশোধন হলেও সে বিষয়ে নজর দেয়া হয়নি। স্কুল কলেজের নীতিমালায় অনলাইনে ক্লাসে পারদর্শী প্রভাষকদের পদোন্নতিতে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তবে, মাদরাসার নীতিমালায় এমনটি করা হয়নি। এতে আইসিটির দিক দিয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকা মাদরাসা শিক্ষকদের আরও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

পদোন্নতি বা দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্তিতেও মাদরাসা শিক্ষকদের সাথে নতুন নীতিমালায় বৈষম্য করা হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। তারা জানান, বেসরকারি স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় যেসব প্রভাষকরা  ৫০ শতাংশের আওতায় জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেননা তাদেরকে একই পদে চাকরির  ১৬ বছর পূর্তিতে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু মাদরাসার এমপিও  নীতিমালায় এমনটি রাখা হয়নি। নীতিমালা সংশোধনীতের এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। যা মাদরাসা শিক্ষকদের সাথে বৈষম্য বলে মনে করছেন কেউ কেউ। 

দাখিল মাদরাসার শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ দেয়া হয়নি মাদরাসার নতুন নীতিমালায়। তা সংশোধনেও শিক্ষকদের পদোন্নতির দাবি উপেক্ষিত। শিক্ষকরা আক্ষেপ করে  বলেন, স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় স্কুলের সহকারী শিক্ষকদের জন্য পদোন্নতিযোগ্য ‘সিনিয়র শিক্ষক’ পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে, মাদরাসা এমপিও নীতিমালায় সহকারী শিক্ষকদের জন্য এ ধরনের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। দাখিল মাদরাসায় শিক্ষকতা করি দেখে কি আমাদের পদোন্নতি পাওয়ার আশা-আকাঙ্খা নেই?-প্রশ্ন তোলেন শিক্ষকরা।  

শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের উচ্চতর গ্রেড নিয়ে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হয়। শিক্ষকদের বেতন কমে যায় বলেও আমরা দেখেছি। যার বাস্তব উদাহারণ দেখা গেছে মাদরাসা প্রভাষকদের উচ্চতর গ্রেডে। কিন্তু নীতিমালা সংশোধনে তা উপেক্ষিত হয়েছে। স্কুল কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের ক্ষেত্রে উচ্চতর গ্রেড পেয়ে বেতন কমলে উচ্চধাপে ফিক্সেশন করার কথা বলাছিল। কিন্তু মাদরাসা শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য সে বিধান রাখা হয়নি। সংশোধনের সময়েও বিষয়টিতে নজর দেয়া হয়নি। 

বিএড-এমএড স্কেল যে উচ্চতর গ্রেড নয় তা স্কুল কলেজ শিক্ষকদের জন্য পরিষ্কার করে বলে দেয়া হলেও মাদরাসার শিক্ষকদের নীতিমালা বা সংশোধনে সে বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। 

শিক্ষকরা আরও বলছেন, স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে এমপিওভুক্ত হিসেবে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক পদে ন্যূনতম ৩ বছরের অভিজ্ঞতাসহ ১২ বছরের অভিজ্ঞতার শর্তারোপ করা হয়েছে। আর মাদরাসার এমপিও নীতিমালায় উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ সমপর্যায়ের আলিম মাদরাসায় অধ্যক্ষ হতে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদধারীদের অভিজ্ঞতা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র উপাধ্যক্ষ বা সহকারী অধ্যাপক পদধারীদের অভিজ্ঞতার শর্তারোপ করা হয়েছে। আলিম মাদরাসার উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতেও জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদধারীদের অভিজ্ঞতা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সহকারী অধ্যাপক পদধারীদের অভিজ্ঞতা শর্ত দেয়া হয়েছে। যা আলিম স্তরের মাদরাসার প্রভাষকদের জন্য খুবই লজ্জাজনক। বিষয়টি নিয়ে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তারা এ বিষয়ে ভ্রক্ষেপ করেননি।      

শিক্ষকরা বলছেন, স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় স্নাতক (পাস) মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ পদে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক পদধারীদেরকে অভিজ্ঞতার শর্তে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বা কলেজের অধ্যক্ষ না হয়েও সরাসরি আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়েছে; অথচ মাদরাসা এমপিও নীতিমালায় স্নাতক (পাস) মহাবিদ্যালয় সমপর্যায়ের ফাযিল স্তরের মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ পদে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক পদধারীদেরকে অভিজ্ঞতার শর্তে  সরাসরি আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়নি। নীতিমালার সংশোধনের ক্ষেত্রেও বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। 

এদিকে মাদরাসার এমপিও নীতিমালায় ইবতেদায়ি প্রধান পদে নিয়োগের যোগ্যতায় সহকারী মৌলভী পদে ৮ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। তাই পদটি আর এন্ট্রি লেভেলের থাকছে না বলে মত দিয়েছেন তারা। এ জটিলতায় শিক্ষক নিয়োগের জন্য ইবতেদায়ি প্রধান পদে আবেদন গ্রহণ করছে না এনটিআরসিএ।  এ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন ইবতেদায়ি প্রধান পদে নিবন্ধিত কয়েক হাজার প্রার্থী। তারা নিয়োগ পেতে আবেদন করতে পারছেন না। এছাড়া সহকারী মৌলভী পদের জন্য অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে আলিম পাস। আবার এ পদের ৮ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে ইবতেদায়ি প্রধান পদে নিয়োগের যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে ফাযিল পাস। এ অসঙ্গতিও নতুন নীতিমালায় সংশোধন করা হয়নি। 

user
user
Ad
Ad