জানুয়ারী ২০, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

+৮৮০১৭৪৪-২২১৩৮৫

ক্যান্সারের কারণ ও প্রতিকার এবং বাস্তবতা

  • Views: 369
  • Share:
জানুয়ারী ১৭, ২০২৫ ১৯:৩৭ Asia/Dhaka

অধ্যাপক ড. মোঃ আজহারুল আরাফাত:: ক্যান্সার হলো এমন একটি রোগ যা শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক/বিকৃত কোষ/অসুস্থ কোষগুলোর অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন বা বৃদ্ধি। প্রায় একশোর বেশি প্রকারের ক্যান্সার রয়েছে। তার মধ্যে কিছু ক্যান্সার দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং কিছু আক্রান্ত স্থানেই সীমাবদ্ধ থাকে- যা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়ায় না। ক্যান্সারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন বা লক্ষণ রয়েছে। যেমন- কোথাও ফুলে যাওয়া অথবা গোটা হওয়া, অস্বাভাবিক রক্তপাত, স্থায়ী কাশি, অপ্রত্যাশিত ওজন কমে যাওয়া ও মলত্যাগে অস্বাভাবিকতা প্রভৃতি।

ক্যান্সারের অন্যতম কিছু কারণ রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ধূমপান, স্থুলতা, ব্যাকটেরিয়া/ভাইরাস দ্বারা সংক্রামক রোগ, আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি, বংশগত জেনেটিক ত্রুটি, হরমোন প্রতিস্থাপন, অসামাঞ্জস্য হরমোন, যেমন- ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন এর মাত্রা বেশি হলে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং দীর্ঘ সময় স্বয়ংক্রিয় রোগ প্রতিরোধ বাঁধাগ্রস্ত হয়।

Tyrosine kinease হলো এক ধরনের এনজাইম। এই এনজাইম সকল ক্যান্সার সৃষ্টিকারী- যা অনকোজিন/onco gene এর প্রধান অংশ প্রকাশ করে এবং ক্যান্সারের আধিক্য তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাহলে এই এনজাইমের উৎপাদন ও কার্যকারিতা বন্ধ করতে পারলে শরীরে ক্যান্সারের অঙ্কুর বন্ধ করা যাবে।

বিশ্বে ক্যান্সার একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা। বর্তমানে প্রায় ৫০% পুরুষ বা অর্ধেক পুরুষ এবং এক তৃতীয়াংশ নারী জীবনের কোনো এক পর্যায়ে ক্যান্সার দ্বারা আক্রান্ত হয়। গবেষণার তথ্যমতে, এক-চতুর্থাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের এই রোগ দ্বারা মৃত্যু ঘটে।

বাংলাদেশে পরবর্তী কয়েক দশক অসুস্থতা ও মৃত্যুর অন্যতম কারণ হবে ক্যান্সার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এর তথ্য মতে, বাংলাদেশের মানুষের মৃত্যুর ষষ্ঠতম কারণ হলো ক্যান্সার। ক্যান্সার গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা (International Agency for Research on Cancer) অনুমান করছে যে ২০০৫ সালে ক্যান্সারের কারণে ৫% মানুষের মৃত্যু ঘটে, যা ২০৩০ সালে ১৩%-এ উন্নীত হবে। বাংলাদেশে পুরুষদের মধ্যে ফুসফুস ও মুখের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেশি এবং মহিলারা স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার দ্বারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়।

ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি দূরারোগ্য রোগ। এটি সকলের কাছে আতঙ্কেরও কারণ। আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা তাদের সাধ্যমতে এই রোগের সঠিক কারণ, কম খরচে সহজে শনাক্তকরণের জন্য টেকসই যন্ত্র ও পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন। তারা এই রোগ থেকে মুক্তির জন্য সহজলভ্য, সহজপ্রাপ্য সকল শ্রেণির মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন ঔষধ আবিষ্কারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ক্যান্সারের অনেক ঔষধ ও থেরাপেউটিক এজেন্ট তৈরি করে এই রোগের চিকিৎসার পথ সুগম হচ্ছে; কিন্তু ঔষধগুলো অনেক দামী ও সহজলভ্য নয়। তাই এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করার জন্য গবেষক ও বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সহজলভ্য, সাশ্রয়ী এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন ক্যান্সারে ঔষধ আবিষ্কার করে বিজ্ঞানীরা একদিন এই রোগের অভিশাপ থেকে মুক্ত করবে- বিশ্ববাসী এই প্রত্যাশায় রয়েছে। এই রোগের ধরন এবং কারণ বহুবিদ, তাই কোভিড-১৯ এর মতো এর অতি দ্রুত কোনো ভ্যাক্সিন তৈরি করাও সম্ভব নয়।

কিন্তু একটি ব্যাপার পরিলক্ষিত হয়েছে, বিশেষ করে বাংলাদেশে, ক্যান্সার নিয়ে সামান্যতম কিছু গবেষণা করে বৈজ্ঞানিক যাচাই ছাড়াই পত্রিকা অথবা টিভি মিডিয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার মাধ্যমে ম্যাজিক্যাল তথ্য প্রকাশ করে আলোচনায় আসতে চায় যা আমাদের দেশের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে যাচাই-বাচাই ছাড়াই মুখরঞ্জক কথাবার্তাকে উপদেশ হিসেবে গ্রহণ করে অভ্যাসে পরিনত করে এবং কিছু কিছু মানুষ এই রোগের ব্যাপারে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এটি মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে বাঁধাগ্রস্ত করে এবং এর প্রভাবও সমাজে ও রাষ্ট্রের সকল জায়গায় পড়ছে।

তাই সঠিক যাচাই করে এই তথ্যগুলো প্রকাশ করে আরো সচেতনতা বাড়ানো উচিত। প্রায় ১০০ এর বেশি প্রকারের ক্যান্সার রয়েছে। তাই প্রতিটি ক্যান্সারের কারণ ভিন্ন এবং আক্রান্ত স্থানও ভিন্ন। তবে কিছু খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা সকল রোগে যেমন প্রভাব ফেলে, তেমনি এই রোগের ক্ষেত্রেও তা লক্ষণীয়। তাই এর সঠিক যাচাই ছাড়া অতি সাধারণভাবে যে কোনো খাবার ও পদার্থকে ক্যান্সারের কারণ হিসেবে ডালাওভাবে প্রচার করা হলে এর সঠিক কারণ ও প্রতিকারের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করা যাবে না। এর ফলে, যেসব নির্দিষ্ট উপাদান শরীরে ক্যান্সারের প্রধান কারণ হয় সেগুলোও গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে এবং তাতে মানুষের উপকারের চাইতে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে।

এই রোগটি মরণব্যাধি হলেও এর প্রতিকার ও প্রতিরোধের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমত স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে হবে, যে অভ্যাস ও খাবার শরীরে রোগ প্রতিরোধ করে তা মেনে চলতে হবে। দুইটি বিষয় ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে অতিমাত্রায় প্রভাবিত করে- অক্সিজেন স্বল্পতা ও অতিরিক্ত চিনির মাত্রা। কিছু খাবার রয়েছে যা ক্যান্সারকে বাঁধাগ্রস্ত করে, যেমন- ভিটামিন বি-১৭; এ-ভিটামিনের স্বল্পতা ক্যান্সারের একটি অন্যতম কারণ- এটি সাধারণত বিভিন্ন খাবারযোগ্য বীজে রয়েছে। এই রোগ প্রথম ধাপে শনাক্ত করতে পারলে আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সচেতনতা ও সহজে শনাক্ত করার ব্যবস্থা জনগনের কাছে পৌঁছাতে পারলে এই রোগের অভিশাপ এবং ভয়াবহতা থেকে মানুষ মুক্তি পাবে বলে আশা করা যায়।

অধ্যাপক ড. মোঃ আজহারুল আরাফাত
রসায়ন বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

user
user
Ad
Ad